Good Luckভালবাসার সাতকাহন (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-৩) Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৫:১২:৫৪ বিকাল

৩.

" বৈরী বাতাসে

ইচ্ছেগুলোর ইচ্ছেমত পদস্খলনে

বেহায়া ভাবনাগুলো পায়ের তলায়

থেকে থেকে পিষ্ট হয়ে চলে।

.

শূন্যতার আরো এক বিঘত উপর দিয়ে

হেঁটে হেঁটে মহাশূন্যে পা বাড়াই।

আমি আর আমার সাথে সে,

ভাবনার ভ্রান্তিজালে আমরা

শূন্যতার এক গহ্বরে হেঁটেই চলি..."

: এ্যাই, শুনছ?

রেখার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসে মিনার। কবিতাটি মনে হয় আর শেষ করা হলনা। একটু বিরক্ত হয়ে রেখার দিকে ফিরে তাকায়। ভ্রু দু'টো কুঁচকে আছে। কিন্তু ওর বিরক্ত চেহারাকে উপেক্ষা করেই রেখা হাসিমুখে তাকিয়ে থাকে।

: তোমাকে না কতবার বলেছি, আমি লিখার সময়ে আমাকে বিরক্ত করবে না।

: আহহা, শোনোই না।

বাধ্য হয়ে চিন্তা-ভাবনা মাথায় তুলে রেখে মিনারকে বউয়ের দিকে মনোযোগ দিতেই হয়। ভ্রু-যুগলও আপনাতেই সমান হয়ে আসে। বহু দিনের অভ্যাস। তা প্রায় বছর দশেক তো হবেই।

একটা বেসরকারি কলেজের বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে আছে মিনার। ওর জীবনে রেখার আগমন এবং চাকরিতে প্রবেশ প্রায় একই সময়ে। রেখা একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে। বেশ গোছালো এবং সুখী একটি সংসার।

সুখী?

আসলেই কি সুখী তারা?

সুখ জিনিসটা এক একজনের কাছে এক একরকম। অনেকবার মিনার নিজেকে প্রশ্ন করেছে। সুখের সংজ্ঞা নির্ণয় করতে চেয়েছে বিভিন্ন ভাবে।

পেরেছে কি?

একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক সে। বেশ কয়েকটি বই বের হয়েছে তার। পাঠক মহলে বেশ সমাদৃতও হয়েছে। মূলতঃ একজন কবি হলেও ভালো গল্পকার হিসেবেও তার নামডাক অনেক। কয়েকটি পত্রিকায় নিয়মিত ওর কলাম ছাপা হয়। আর ঈদ সংখ্যাগুলোতে মিনার মাহমুদের লিখা থাকবে না, ভাবাই যায় না।

ওরা কয়েকজন নবীণ-প্রবীণ লেখক মিলে নিজেদের একটি আড্ডাস্থল বানিয়েছে। নাম দিয়েছে 'বিদ্যা উৎসাহী সভা'। সংক্ষেপে 'বিউস'। প্রতিদিন বিকেলে ওদের আড্ডা বসে। সেখানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি হয়... নতুন গল্প-উপন্যাসের প্লট নিয়ে বিশ্লেষণ হয়- মোটকথা সাহিত্যের রস আস্বাদনের কোনো কমতি-ই নেই ওখানে। শমসের নগর আবাসিক এলাকার যে বাসাটিতে মিনার ভাড়া থাকে, সেই বিল্ডিঙয়ের তিনতলার চিলেকোঠার রুমটিকেই ভাড়া নিয়ে 'বিউসের' কাজ চলছে।

দিনগুলো এভাবেই কেটে যাচ্ছে।

নিরুদ্বেগ এবং উত্তেজনাহীন।

তবে এই জীবনে সুখ খুঁজে না পেলেও অ-সুখও তো নেই। কিন্তু জীবনের একটি অন্যতম চাওয়া মিনার-রেখা দম্পতির এখনো পূর্ণ হয়নি।

ঘর আলো করে ফুটফুটে একটি সন্তান! যার কচি তুলতুলে হাত পা ওদেরকে অনাবিল সুখের দোলায় ভাসাবে। এই অনুভূতিটুকু স্বপ্নই থেকে গেল এই দু'জনের।

সমস্যাটি মিনারেরই। রেখা মা হবার সকল গুনাবলী নিয়েও মিনারের অপূর্ণতার জন্য তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে চলে। আর দুজন দুজনকে ফাঁকি দিয়ে সুখের অভিনয় করে যাওয়া... নিরন্তর এক মেকী ভালোলাগার বিচ্ছিন্ন অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে সকলের ভিতরে থেকেও এক বিচ্ছিন্ন উপদ্বীপের বাসিন্দা যেন ওরা।

রেখা গত দশটি বছর আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলে দুলে এই জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রথম দিকে বিরক্ত হত... কষ্ট পেত... কাঁদত... ধীরে ধীরে পাষাণ হয়ে গেল-অনুভূতিতে... কিন্তু মিনারের জন্য অন্যরকম এক ভালোবাসাও একই সাথে হৃদয়ে বয়ে চলছে। সেই সময়ে কখনো কখনো মিনারকে ছেড়ে দেবার ইচ্ছেটাও জাগত মনে। কিন্তু পরক্ষণেই ঐ ভালবাসাই ওকে এই সংসারে টিকিয়ে রেখেছে।

কিন্তু বেঁচে থাকা মানে কি এক জোড়া মানব-মানবীর শরীরের প্রয়োজনে কাছে আসা?

ভালবাসার লেনদেন?

জৈবিক চাহিদা?

অলঙ্কার বা দামী পোষাকের ভিতরে ফ্যাশন সচেতনতায় ডুবে থাকা?

উৎকৃষ্ট খাবারে বুঁদ হয়ে রসনাবিলাস?

এর বাইরেও তো অনেক কিছু রয়েছে। যা চিন্তা-চেতনাকে ক্ষণে ক্ষণে প্রলুব্ধ করে। তিলতিল করে যে সভ্যতা আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখান থেকে পিছু ফিরে কখনো কখনো কি এই মন একটু অসভ্য হতে চায় না? নিষিদ্ধ লোবানের প্রতি কি 'সিস্টেমেটিক ওয়েতে' চলা আমাদের নাসারন্ধ্র কখনো আগ্রহ প্রকাশ করে না?

কখনো কখনো নিজের অজান্তেই কেউ কেউ নিষিদ্ধ সম্পর্কের জালে জড়িয়ে পড়ে।

মিনারও এমনই এক জালে জড়িয়ে পড়েছে। লতা নামের একজন ওর জন্য সেই জাল বিছিয়ে রেখেছে। বছরখানেক ধরে মিনার লতার সাথে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছে। কেমন করে যেন সব হয়ে গেল। রেখা এসবের কিছু-ই জানে না।

আসলেই কি তাই?

মিনারের তেমনই ধারনা।

এর শুরুটা সাহিত্য চর্চার ছদ্মাবরণে। লতাও মোটামুটি মানের লেখিকা। বিউসের অন্যতম নবীন এবং সম্ভাবনাময়ী লেখিকা। প্রতিদিনই সে আসে। ঝড়-বৃষ্টি কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনা। রেখা ওর স্কুল এবং ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সে কখনো চিলেকোঠার রুমটিতে সাহিত্য সভায় রস আস্বাদনে যায় না। স্কুলের কচি কচি মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে রেখার ভিতরে বাস করা এক মা মাতৃত্বের স্বাদ আস্বাদনে বিভোর হয়ে থাকে। আর রাতে মিনারের শয্যার অনিয়মিত সঙ্গিনী হবার সময়টুকু ছাড়া বাকী সময়টুকু পরীক্ষার খাতা দেখা এবং আনুসঙ্গিক অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকে। এই ব্যস্ততার জন্য মিনার কলেজ থেকে ফিরে এসে ওর নিরবচ্ছিন্ন অলস সময়টুকুতে অর্ধাঙ্গিনীর কাছ থেকে ফীডব্যাক না পেয়ে ক্রমেই নিস্তেজ হতে থাকে। ওরা ক্রমেই একই রুমে থেকেও দুজনে দুই ভূবনের বাসিন্দায় পরিণত হয়। নিজের সন্তান প্রদানের অক্ষমতায় মিনার রেখার কাছ থেকে একটু সময় জোর করেও নিতে দ্বিধা করে।

সময় বয়ে চলে... ভালোবাসাহীন ভালোলাগার এক সুপ্ত মহীরুহের বীজ দুজনের সম্পর্কের ভিতরে জন্ম নিতে থাকে। আর লতা নামের এক উচ্চাকাংখী অবিবাহিতা মিনারকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করার অভিপ্রায়ে সেই বীজের গোঁড়ায় নিয়মিত পানি ঢেলে মহীরুহকে জাগিয়ে তুলতে চায়।

এক বৃষ্টির দিনে চিলেকোঠার সেই রুমটিতে মিনারের প্রথম পদস্খলন হয়েছিল...

নিজে তৈরী হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে 'রেডি হওয়া রত' রেখাকে দেখে মিনারের কেন জানি এই কথাগুলো মনে পড়ে যায়। বুকের গভীর থেকে বের হয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিনারের কাঁধ দুটোও ন্যুব্জ হয়ে আসে। আয়নার ভিতর দিয়ে রেখার চোখে চোখ পড়ে। রেখার হাসির উত্তরে মিনারও হাসে। তবে ইদানিং মিনারের হাসি কেন জানি ওর চোখকে স্পর্শ করে না।

রেখা কি সেটা লক্ষ্য করে?

রেখাকে নিয়ে সাভারের উদ্দেশ্যে বের হবার সময় মিনারের মনে এই কথা অনুভূত হয়, ' আজ লতা এসে ফিরে যাবে।'

নিজের অর্ধাঙ্গিনীর শরীর ঘেষে একই রিক্সায় বসে থেকেও একজন পুরুষ অন্য এক 'আউটসাইডার' নারীকে নিয়ে ভাবনার জগতে বিরাজ করে।

তার অর্ধাঙ্গিনী সেটা একটুও কি বুঝতে পারে? Good Luck

(ক্রমশঃ)

বিষয়: সাহিত্য

৯৮২ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

274325
১৪ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:২৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : মানুষ যদি মুখ দেখ মনের কথা বলতে পারতো.........তবে তো কষ্টই থাকতো না কারোর!
১৪ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪১
218260
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ।
তবে এটা খুবই অসম্ভব।
যারা এটি শক্তি অর্জন করেছেন, তাঁরা কখনো বলেন না।
সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
274334
১৪ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫২
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


পড়লাম, জাযাকাল্লাহ..

দোয়া করি

১৪ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০০
218264
মামুন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..
পড়বার জন্য এবং অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জাজাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
274348
১৪ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৮
এবেলা ওবেলা লিখেছেন :
Worried Worried Worried
১৫ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৫৪
218483
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ।
তবে প্রয়োজনীয় প্লাগইন না থাকাতে দেখতে পারলাম না।
জাজাকাল্লাহ।Good Luck Good Luck
274403
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:০২
আফরা লিখেছেন : বুঝতে না পারাই ভাল মনে যে ক্ষণে ক্ষণে কত ধরনের কথাই দোলা দিয়ে যায় ষেটা যদি অন্য কেউ বুঝতে পারত তাহলে খবর অন্য রকম হত ।

ভাইয়া আমি কিন্তু এটা খারাপ কিছু মনে করে বলি নাই ।আমি কারো উপর মনে মনে খুব রাগ হলাম সেটা যদি সে বুঝতে পারে তাহলে ব্যপারটা কেমন হয়ে গেল না ।

তাই কারো মনের কথা বুঝতে না পারাই ভাল ।
১৫ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৫৬
218484
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ।
সহমত আপনার সাথে।
এই গুণ কেবলমাত্র আল্লাহপাকের জন্যই নির্দিষ্ট। আপনার উল্লেখিত সমস্যার সৃষ্টি হবে বিধায়ই 'তিনি'মানুষকে এই গুণ দেন নাই। একমাত্র অন্তর্যামী মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
274404
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:০৫
ফেরারী মন লিখেছেন : রেখা মা হবার সকল গুনাবলী নিয়েও মিনারের অপূর্ণতার জন্য তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে চলে। আর দুজন দুজনকে ফাঁকি দিয়ে সুখের অভিনয় করে যাওয়া... নিরন্তর এক মেকী ভালোলাগার বিচ্ছিন্ন অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে সকলের ভিতরে থেকেও এক বিচ্ছিন্ন উপদ্বীপের বাসিন্দা যেন ওরা। Sad Sad Sad

কষ্ট পেলাম বহুৎ কষ্ট। যার শুরু আছে শেষ নেই।
১৫ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৫৭
218485
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ।
আমাদের আশেপাশে এরকম অনেক রেখা নিরন্তর কষ্ট পেয়েই চলেছে। আমরা আর কতটুকু জানতে পারি।
কষ্টের অনুভূতি রেখে গেলেন, আমিও কষ্টে বিদীর্ণ হলাম।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
274500
১৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:২৬
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : কষ্টের গন্ধ এবং স্বাদ মাখাগল্প! দেখি কোথায় এর পরিনতি গড়ায়?

শুকরিয়া Good Luck
১৫ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৫৮
218486
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ।
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য শুভেচ্ছা।
কষ্ট আমাদেরকে ঘিরে নিজস্ব খেলা খেলে যাচ্ছে। এর ভিতর থেকে বের হয়ে সুখকে অহর্নিশি খুঁজে বেড়ানোটাই জীবন।
সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
274505
১৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:৪৩
কাহাফ লিখেছেন :

আশা-নিরাশার দোলাচলে দোলে দোলে আে সময় মানুষ ঠিকই অভ্যস্ত্ হয়ে যায়। প্রথম প্রথম প্রচন্ড কিছু রাগ......কিছু শক্ত অনুভূতি কষ্টের মহাস্রোতে ভাসিয়ে নিতে চাইলেই সামাজিক বাস্তবতা পাষান পাথরের বাধে আটকে দেয় তাকে। কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে নিতেও যেন নেয়া হয়ে উঠে না।

অনেক ধন্যবাদ ও ভাল লাগা রেখে গেলাম.....। Rose
১৫ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৫৯
218487
মামুন লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
আপনার জীবনে যেন কষ্ট কখনো না আসে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
১৫ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০৩
218488
কাহাফ লিখেছেন :
নিয়তীর হাতে ধরে চলছি শুধু.... যদিও পরিণাম কী তা জানি না!!

আপনাদের জন্যেও অনেক সুখী থাকার দোয়া।Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File